❏৫ প্রকল্পে আত্মসাৎ প্রায় ২২ লাখ
❏২২ লাখের প্রকল্প দুর্নীতির খবরে কাজ ফেরত কতৃপক্ষের
❏বেড়িয়ে আসছে থলের বেড়াল চেয়ারম্যান সিদ্দিকুরের রহমানের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ।
❏জালিয়াতির হোতা ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মাহবুবুর রহমান- চেয়ারম্যান সিদ্দিক❏
‘সাক্ষর জাল’ এর গুজবে দুর্নীতি আড়াল চেষ্টা(পর্ব-২)
❏৫ প্রকল্পে আত্মসাৎ প্রায় ২২ লাখ
❏২২ লাখের প্রকল্প দুর্নীতির খবরে কাজ ফেরত কতৃপক্ষের
❏বেড়িয়ে আসছে থলের বেড়াল
আজকাল বিডি ডেস্ক।। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৬ নম্বর মাধপপাশা ইউনিয়নের হত- দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের মজুরির টাকা কৌশলে মেম্বরদের মাধ্যমে নিজের পকেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সিদ্দিকুর উপজেলার ৬ নম্বর মাধবপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে চলতি মাসের ১৪ তারিখ। লিখিত অভিযোগে টিআর,কাবিখা,জিআরসহ বেশ কিছু প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এর প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু কাগজপত্র দিয়েছেন ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতেমা আক্তার লিপি ও ওই ইউনিয়নের আরেক ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেখা বেগম। এছাড়াও চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে নারীদের প্রতি অবিচার,অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের সরকার কতৃক হতদরিদ্রর জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রকল্প (ইজিপিপি) মাধ্যমে ৪০ দিনের ১ম পর্যায়ের কর্মসূচির সম্পূর্ণ টাকা কৌশলে আত্মসাৎ এর অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ডের মেম্বররা। ২য় পর্যায়ের আত্মসাৎ চেষ্টার খবর ছাপানোর পর প্রকল্প বাতিল করেছে কতৃপক্ষ।
জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬ নং মাধবপাশা ইউনিয়ন থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ২০২১- ২০২২ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আর এই প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর ও তিনজন মেম্বরের বিরুদ্ধে। তিনজন মেম্বর হলেন, ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মাহবুবুর রহমান,৭ নং ওয়ার্ডের খলিলুর রহমান,৩ নং ওয়ার্ডের ফখরুল ইসলাম রোকন।
তবে ১ম পর্যায়ের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিকের মোবাইল নম্বর একই সিরিয়ালের। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রকল্প দিয়েছে ইউপি সদস্য (৫নং ওয়ার্ড) মাহবুবুর রহমান, (৭নং ওয়ার্ড) খলিলুর রহমান ও (২নং ওয়ার্ড) ফকরুল ইসলাম রোকন। তারা নিজেরা মোবাইল নম্বর কিনে শ্রমিকদের নামে তা তালিকায় জমা দিয়েছেন। যার কারণে এই টাকা শ্রমিকরা না পেয়ে সরাসরি এই মেম্বারদের কাছে যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার একজন শ্রমিকের জন্য দৈনিক ৪শ টাকা করে প্রদান করে। সেক্ষেত্রে ৪০ দিন একজন শ্রমিক ১৬ হাজার টাকা পাবে। আর ৫ প্রকল্পের ১৩৭ জন শ্রমিক এই কাজের জন্য ২১ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাবে। এটাই সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই ইউপি সদস্যরা আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে। তালিকার নাম ধরে ফোন দেয়া শুরু করলে বেড়িয়ে আসে মূল রহস্য।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকার সিরিয়ার নম্বর ৯০ এর তাহের আলীর পুত্র কাঞ্চন আলী হাওলাদার। তাকে ০১৯৮৭৫৫৮৪** নম্বরে ফোন দিলে তিনি জানান নম্বরটির মালিক মহসিন মিয়া, পিতার নাম আমিন মিরা।তিনি কোন কাজ করেননি,টাকাও পান নি। অথচ,তার নাম তালিকায় তাহের আলীর পুত্র কাঞ্চন আলী হাওলাদার এবং জন্ম ৬.১০.১৯৭০। নম্বরটি নগদ একাউন্ট করা।
আরেকটি নাম নাসিমা। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।তার নাম তথ্যানুযায়ী মেলেনা এবং তিনি বলেন তাকে মেম্বর মাত্র ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন হাতে হাতে।তার মোবাইল নম্বর ০১৯৩৮১১১***
৯ নম্বর ওয়ার্ডের পারভিন বেগম।তিনি জানিয়েছেন তিনি কোন কাজ করেননি আর টাকাও পান নি।তবে তার মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত তা তিনি জানতেনই না।
একইভাবে আরেকজন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতেমা।তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন বন্ধ করে রাখেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদুল ইসলাম জানান তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন।তার মোবাইল নম্বর ০১৭৩৬৩৮৯২**
৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতেমা আক্তার লিপি বলেন, আমার এলাকায় শ্রমিক দিয়ে এই প্রকল্পের কোনো কাজ করা হয়নি।টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানি।আমরা প্রকল্পের সংখ্যা, প্রত্যেক প্রকল্পের সভাপতির নাম,পদবী,ঠিকানা,প্রকল্পের কাগজ, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের নাম,ঠিকানা,প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণসহ সকল উত্তোলিত বিলের তথ্য চাইলে চেয়ারম্যান বা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোনটাই দেন না। ১ম পর্যায়ের প্রকল্প তালিকায় খোজ নিয়ে দেখেন,একই লিস্ট ২য় পর্যায়েও জমা দিয়ে আবার তুলে নিয়েছে।কারন এটা নিয়ে আমরা খোঁজ পেয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। জালিয়াতি তথা চেয়ারম্যান এর সাক্ষর জালের ঘটনা গুজব হতে পারে। কারন পিআইও বাবুগঞ্জ আমাকে জানিয়েছেন যে,চেয়ারম্যান সাহেব লিখিতভাবে ইউএনও স্যারকে দিয়েছেন।এই মর্মে যে,তার কোন সই জাল করা হয়নি।আর তা হলে তিনি (চেয়ারম্যান সাহেব) এটার জন্য জিডি করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ রোধে চেষ্টা করতেন। চেয়ারম্যান সাহেব নাকি কয়েকজন মেম্বরদের দিয়ে পত্রপত্রিকা তে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন সই জাল করার ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্ন হল, তাহলে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার ঘটনায় মামলা হচ্চেনা কেন? ইউএনও স্যার কি এসব ঘটনা দেখছেন না?
ভুক্তভোগী ও লিখিত অভিযোগকারীরা জানান,
৪০ দিনের এই প্রকল্পে গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনের কাজ করার কথা থাকলেও তা করানো হয়নি। শ্রমিক নয়, বরং মাটি কাটার বেকু দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়েছেন তিনি। নিজের লোকদের মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর।এছাড়া কম্বল থেকে জিআর সবই প্রকল্পের টাকা জড়িত মেম্বরদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেন তিনি।
ওই ইউনিয়নের আরেক ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেখা বলেন, আমার এলাকায় শ্রমিক দিয়ে এই প্রকল্পের কোনো কাজ করা হয়নি।টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানি।আমরা প্রকল্পের সংখ্যা, প্রত্যেক প্রকল্পের সভাপতির নাম,পদবী,ঠিকানা,প্রকল্পের কাগজ, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের নাম,ঠিকানা,প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণসহ সকল উত্তোলিত বিলের তথ্য চাইলে চেয়ারম্যান বা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোনটাই দেন না।কারন সেখানে শতভাগ গলদ রয়েছে।
আমার ওয়ার্ডে প্রকল্পের তেমন কোনো কাজ হয়নি। সম্পূর্ণ টাকা চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অভিমত, এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে চেয়ারম্যান জিডি করবে।জালিয়াতি তথা চেয়ারম্যান এর সাক্ষর জালের ঘটনা গুজব হতে পারে।আর তা হলে তিনি (চেয়ারম্যান সাহেব) এটার জন্য সরকারের টাকা আত্মসাৎ রোধে চেষ্টা করতেন।
এ বিষয়ে ৬ নং মাধবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর জানান, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।তবে ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মাহবুবুর পরিষদের বিভিন্ন সরকারী কাগজ জাল জালিয়াতি করে।তাকে ধরে প্রশ্ন করেন না কেন? সে আমার সাক্ষরও বিভিন্ন সময়ে জাল করে।
এদিকে ২৭ তারিখ সংবাদের কথিত এক প্রতিবাদ এ তিনি অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীদের ‘চাদাবাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও স্যার। আমি তার মাধ্যমে জানাবো। ‘
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ‘পত্রিকায় ২য় পর্যায়ের কাজের দুর্নীতি নিয়ে খবর ছাপার পর আমি পত্রিকার মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছি।ইউএনও স্যারকে ও কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই দিয়েছি।’ ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ম প্রকল্পের কাজের বিবরণে অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন। তাকে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply