বরিশালে আঃলীগ দুই গ্রুপের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ আহত ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল:: বরিশাল শহরের কাশিপুর এলাকায় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ ব্যাপক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়গ্রুপের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পরে এই সংঘাতের ঘটনায় কাশিপুর বাজার এলাকায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অন্তত আধা ঘণ্টার জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘটনাপ্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত কাউন্সিলর এবং ছাত্র-যুব ও আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শনিবার সকালে বাসযোগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াস্থ জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। সেখান থেকে বরিশালে ফেরার পথে কাশিপুর এলাকায় বাস থেকে নেমে দুটি গ্রুপ লোহার রড, পাইপ এবং হাতুড়ি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতের ভিডিও স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, দু’গ্রুপের সংঘর্ষের একপর্যায়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিনের কর্মী সোহেল ফকিরকে রাস্তার পাশে ফেলে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় কয়েকজন। এতে সে রক্তাক্ত হলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে তাকেসহ উভয়গ্রুপের ৬ জনকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে দাবি, সংঘাতে জড়িতরা সকলে বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী। তবে সোহেল ফকির, আশিক ও জাকারিয়া আলম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন এবং মাহাদী হাসান, তুহিন ও ফাইজুল কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য ওয়াসিম দেওয়ানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। জসীম এবং ওয়াসিম তৎকালীন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের একই কমিটির সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন।
ঘটনাপ্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, মেয়র এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও টুঙ্গিপাড়াস্থ বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে যায়। কিন্তু তারা সেখানে পৌছানোর আগেই আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট নামক এলাকায় বাসের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। টুঙ্গিপাড়া পৌছে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে তারা বরিশালে ফেরার পথে গৌরনদীর বাটাজোরে ও উজিরপুরের ইছলাদিতে ফের বাসের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে আ’লীগ নেতারা তাদের শান্ত করেন। কিন্তু একটি গ্রুপ মুঠোফোনে তাদের লোকদের কাশিপুরে অবস্থান নিয়ে থাকতে বলেন এবং বাসটি সন্ধ্যার আগে সেখানে পৌছালে শুরু হয় উভয়গ্রুপের সংঘর্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী মামুন জানান, কাশিপুর এলাকায় উভয়গ্রুপের সংঘাত এতটা জোরালো রুপ নেয় যে, চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বরিশাল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সোহেল ফকিরকে রাস্তার পাশে ফেলে প্রতিপক্ষরা লোহার রড এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখে। মহাসড়কের ওপরে প্রকাশ্য এই রক্তারক্তির ঘটনা আশপাশের বাসিন্দাদের হতবাক করেছে, অনেকে হয়েছে বাকরুদ্ধ।
এই সংঘাতের ঘটনায় জসীম এবং ওয়াসিম তাদের অনুসারীদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে কারা জড়িত তাদের নাম-পরিচয় বলতে পারছেন না। উভয়ে বলছেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সংঘাতের সূত্রপাত কী তাও জানার চেষ্টা করছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে তিনিসহ পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু এর আগেই উভয়গ্রুপের কর্মীরা সটকে পড়ে এবং আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফলে ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি এবং রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায়ও অভিযোগ করেনি।’
Leave a Reply