রঙিন রসাল ফলের দিন রঙিন রসাল ফলের দিন – ajkalbd24.com
  1. admin@ajkalbd24.com : admin : H.M Aslam
  2. akazadjm@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  3. ajkalbd24.com@gmail.com : ajkalbd24 : Niaz Mohammad
  4. hafijakhan804@gmail.com : ajkal1 : ajkal1
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

রঙিন রসাল ফলের দিন

আজকাল ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০
  • ২০৯ সময় দর্শন

আজকাল ডেস্ক।।গ্রীষ্মকালের ফল। তবে সেগুলো গড়ায় বাংলার বর্ষা অবধি। ফলের ঝুড়ি আর খাবার টেবিলগুলো ভরে ওঠে আম, জাম, কাঁঠালে। সে–ও এক সৌন্দর্যই বাংলাদেশের। আবার ফলগুলো শুধু খেতেই যে সুস্বাদু তা নয়, সৌন্দর্যচর্চাতেও এগিয়ে।
বিতর্কটা তাঁকে নিয়ে চলতেই থাকে নিরন্তর যে তিনি এ বিষয়ে কিছুই লেখেননি তেমন। খুব বেশি না লিখলেও জীবনযাপনের যে ছকে তিনি অভ্যস্থ ছিলেন, সেখানে খানাখাদ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই সকালবেলা উঠে হালকা নাশতা, কফি; তারপর নিমপাতার রস! এরপর সারা দিন চলত নানা পদের খাবার। তাঁর ছেলে জানিয়েছেন, অদ্ভুত সব খাবারের ধারণা আসত তাঁর বাবার মাথা থেকে আর মা সেগুলো রেঁধে দিতেন নিপুণ হাতে। সেই তিনি, নিজের ছেলেবেলার খেরোখাতা থেকে উদ্ধার করে যা বলেছেন, সেটা হয়ে গেছে জ্যৈষ্ঠ মাসের আইকনিক পদ্য। বলছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা, আম পাকতে দেখলেই তাঁর কথা মনে হয় আমার।

ব্যাপারটা ঠিক আদিখ্যেতা নয়। ‘শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি’ বলে প্রবাদ তৈরি করলেও, বাঙালি রসাল ফলের মাসের চিত্র তেমন আঁকতে পারেনি এখনো।

‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি,

সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে

হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ,

পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।’

আমসত্ত্ব দুধে দিয়ে তার ওপর একটা কলা চটকে, তারও ওপর একটা সন্দেশ দিয়ে দিলে কখন যে সেটাকে চেটেপুটে খেয়ে নেবেন, নিজেই টের পাবেন না। সেখানে পিঁপড়ার জন্য উচ্ছিষ্ট!

রঙে, স্বাদে আমের নেই কোনো তুলনাবলে রাখা ভালো যে জ্যৈষ্ঠ শুরু হলেও হরেক ফলের স্বাদ মেলে আষাঢ় পর্যন্ত। পাকা আম কুড়ানোর যে সুখ, সেটা ওই আষাঢ়েই। উথালপাথাল বৃষ্টিতে ভিজে নীল ঠোঁটে শোঁ শোঁ বাতাসে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে এ গাছের তলা থেকে সে গাছের তলায় ছুটে বেড়ানোর দিন জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ থেকে পুরো আষাঢ় মাস। তার আগে চলে ওই, ঢিল দিয়ে আম পাড়ার কাল। এরও আগে আধকাঁচা আমে আচার বানানোর সময়। রবীন্দ্রনাথ জানতেন কি না, জানা নেই। কিন্তু গ্রামের কিশোরেরা এককালে জানত, গাছপাকা আম খেতে হয় বাঁশের ধারালো ছিলকা অথবা ঝিনুক দিয়ে কেটে। তাতে আমের স্বাদ থাকে অটুট। যত টক আমই হোক, তাতে হালকা লবণ আর চিনি মিশিয়ে দিলে সেটা হয় অমৃতের মতো!

জ্যৈষ্ঠ–আষাঢ় মাসের প্রধান আকর্ষণ আম। মির্জা গালিব থেকে রবীন্দ্রনাথ—কার নাম বাদ দেব আমপ্রেমী হিসেবে! মুর্শিদাবাদের নবাবদের কথা বাদই দিলাম। ইতিহাস বলছে, ভারতবর্ষের বিখ্যাত সব আমের বাগান ছিল তাঁদের দখলে।

কাঁঠাল, জাম, লিচু আর ডেউয়া এ সময়ের অন্যতম নায়ক।

আমজনতা আমখোর, কিন্তু কাঁঠাল খেতে একটু সিরিয়াস হতেই হয়। নইলে জমে না। কারণ, কাঁঠাল নাকি গুঁফো মানুষের খাবার। গাছে কাঁঠাল থাকবে আর আপনি গোঁফে তেল দিতে দিতে খাবেন! গোপাল ভাঁড় একদিন গোঁফে তেল মেখে রাজদরবারে হাজির। মহারাজ বললেন, ‘কী হে, হঠাৎ গোঁফে তেল মাখছ যে বড়!’ গোপাল বিনয়ে বিগলিত হয়ে বললেন, ‘মহারাজ, দরবারে আসতে আসতে দেখলুম গাছে কাঁঠাল ঝুলে আছে। আপনার অনুমতি ছাড়া কীভাবে…’সেই থেকে নাকি প্রবাদই হয়ে গেল ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।’

টক–মিষ্টি জামের ভর্তাগ্রামে দেখেছি, পুরো এক বিঘা জমিতে হাল দিয়ে এসে কৃষক বসে পুরো একটা প্রমাণ আকারের কাঁঠাল একা খেয়ে ফেলছেন চালের ছাতু মিশিয়ে! তারপর সারা দিন পার। শোনা যেত, অমুকে এক বসায় দুখানা কাঁঠাল সাবড়ে দিতে পারে কোনো কথা না বলে। পান্তার সঙ্গে, মুড়ি-মুড়কি দিয়ে মেখে, যব, গম কিংবা চালের ছাতু মেখে অথবা গাছতলায় বসে এমনি এমনি কোয়ার পর কোয়া কাঁঠাল খেয়ে ফেলা যায় চুপচাপ। আর কাঁঠালের বিচি? আহা! ভেজে বা পুড়িয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। কিংবা সেদ্ধ করে ডাল অথবা সবজির সঙ্গে মিশে দিয়ে কিংবা শুঁটকি দিয়ে রেঁধে অবলীলায় খেয়ে ফেলা যায় কাঁঠালের বিচি। আর পরিপক্ব হওয়ার আগের কান্দা বা এঁচড় তো বাংলার নিরামিষ রান্নায় একটা অধ্যায়ই দখল করে নিয়েছে। এখনো যদি এঁচড় খুঁজে পান, ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে এয়ারটাইট প্যাকেটে ফ্রিজের গভীরে রেখে দিন। বছরভর খেতে পারবেন।

সে একদিন ছিল বটে! বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলের সামনের জামের গাছ আমরা সাবড়ে দিতাম। আমাদের চিৎকার শুনে বান্ধবীরা প্লাস্টিকের বাটিতে লবণ আর শর্ষের তেল নিয়ে হাজির হতো। তাতে জাম ফেলে চটকে খেতে খেতে কত কটাক্ষ–হানাহানি! তারপর কত বছর কেটে গেল! এখন জাম কিনে খেতে হয় ফলের দোকান থেকে। তারপরও আমাদের হাত–মুখ ভরে ওঠে স্মৃতির বেগুনি রঙে। সঙ্গে লবণ, শর্ষের তেল আর কাঁচা মরিচ থাকলে স্মৃতি তাতিয়ে তোলে প্রখরভাবে।

এ সময়ের ফল হিসেবে ডেউয়ার কথা আমরা ভুলেই গেছি। আমরা বলতাম, ছোট কাঁঠাল। কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোয়া ভরা, পাকলে গোলাপি রঙের ডেউয়া এখন হঠাৎ হঠাৎ দেখতে পাওয়া যায় রাস্তার ফলের দোকানে অবহেলায় পড়ে আছে।

ঘনায়মান কালো মেঘ যখন তেড়েফুঁড়ে নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, বাংলাদেশ পরিণত হয় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের ডেরায়। খাবার টেবিলগুলো ভরে ওঠে আম, জাম, কাঁঠালে। সে–ও এক সৌন্দর্যই বটে বাংলাদেশের। স্বর্গ কোথায় হে!

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর