ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে আজ রোববার মধ্যরাত থেকে দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, ইলিশা নদী, সাগর মোহনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার খবর পেয়ে টানা তিন মাসের মাছ ধরার অভিযান শেষে জেলেরা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেক জেলে মাছ বিক্রি না করে পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ফিরছেন খালি হাতে।
ভোলা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, ইলিশা নদী, সাগর মোহনাসহ দেশের ৩৮টি নদ-নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় সাগর থেকে উঠে আসা মা ইলিশ নদীর মিষ্টি পানিতে ডিম ছাড়বে। তাই সব ধরনের মাছ শিকার, মজুত, বহন, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে বরফকল।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ প্রজনন মৌসুমে দেশের ৩৮টি জেলার নদ-নদী ও সাগরে নিষেধাজ্ঞা অভিযান চলবে। এতে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়বে। এসব জেলে পরিবারকে ২০ কেজি করে ১১ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হবে। এরপরও যদি কেউ মাছ শিকারে নামেন, আর ধরা পড়েন, তাহলে কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। নিষেধাজ্ঞা সফল করতে প্রচারসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আজ ভোরে ফজরের আজান হয়ে গেছে, সূর্য তখনো ওঠেনি। এরই মধ্যে মোটরসাইকেলের ভোঁ ভোঁ শব্দ কানে আসে। সামর্থ্যবানেরা মাছঘাটে মাছ কিনতে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের হাতে বাজার ব্যাগের বদলে বস্তা দেখা যায়। বোঝাই যাচ্ছে, বেশি করে ইলিশ কিনতে যাচ্ছেন তাঁরা। ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি, নাছিরমাঝি, ভোলা খালের মাথা, দৌলতখানের মাঝিরহাট মাছঘাটে গিয়ে একই দৃশ্য দেখা যায়।
আড়তদারেরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে ঘাটগুলোতে স্থায়ী ফড়িয়া ও পাইকারি ব্যবসায়ীর চেয়ে খুচরা ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ইলিশ মাছের দামও হাঁকা হচ্ছে বেশি। ৭ থেকে ৮টি জাটকায় এক কেজি, এমন ইলিশের হালির (৪টি) দাম উঠছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা। কেজি পড়ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
ভোলা খালের মাথা মাছঘাটে উপজেলার আলীনগরের ক্রেতা সোয়েব আখতার (৫০) আড়তদারের বাক্সের কাছে বসে আছেন। তিনি বলেন, ‘দামে মিল করতারি না, ঘণ্টার বেশি ঘোরাঘুরি করতেছি। এট্টু জিরাই।’
এ ঘাটেই কথা হয় আরেক ক্রেতা ওয়েস্টার্নপাড়ার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১০ হালি জাটকা লোইছি। ৪ থেকে ৫টায় কেজি অইবো। হালি পড়ছে ১ হাজার ৫০ টাকা।’ উপজেলার পাঙাশিয়ার ক্রেতা নুরে আলম বলেন, ‘২২ দিন নদীর মাছ ধরা বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে রাজাপুর জোড়খাল মাছঘাট থেকে ৪০০ টাকা হালিতে জাটকা কিনছি।’
Leave a Reply