নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :: ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যের বিরুদ্ধে হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে মারধরের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) নার্সরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।পরে হাসপাতালের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা কর্মস্থলে ফিরে যান।তবে তাদের এ বিক্ষোভের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কোনো অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র এক স্টাফ নার্সের ওপর পুলিশ সদস্যদের হামলার বিচার এবং দায়িত্বরত অবস্থায় হামলার শিকার হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন থেকে মামলা দায়েরের দাবিতে স্টাফ নার্সরা বিক্ষোভ করে। তারা পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কোনো অসুবিধা হয়নি। রোগীদের কথা চিন্তা করে প্রতি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত কিছু নার্স ছিলেন।’
জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত একজন নার্স জানান, গত রাতের মাঝামাঝি সময় সালাউদ্দিন নামে বরিশাল ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হাসপাতালের সার্জারি-১ ওয়ার্ডে হয়ে ভর্তি হন। ভর্তির শুরুতে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম তার নাম-পরিচয় জানতে চাইলে সঙ্গে আসা লোকজন ক্ষিপ্ত হন। এরপর তারা দরজায় লাথি মেরে জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করে এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলামকে মারধর করে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন আসেন। তারা প্রথম থেকেই পুলিশ পরিচয় দিয়ে উগ্র ব্যবহার শুরু করেন। জরুরি বিভাগে রোগীর নাম-ঠিকানা না বলা হলে কোনোভাবে তাকে ভর্তি করা যায় না। আর দায়িত্বরত ব্রাদার নাম জিজ্ঞেস করতেই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই লোকজন তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে জরুরি বিভাগের লোকজনই ওই নার্সকে মুমূর্ষু অবস্থায় সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। একইসঙ্গে ভর্তি করা হয় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যকেও।
এ বিষয়ে স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর নাম জানতে চাইলে ২-৩ জন মিলে রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। মোট ৬-৭ জনের মধ্যে ওই ২-৩ জনই আমাকে চেয়ার দিয়ে পেটায় এবং কিল-ঘুষি মারে।’স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহিনা আক্তার বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আহত নার্সকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে সিকরুমে রাখা হয়েছে।’
আন্দোলনরত নার্সরা জানিয়েছেন, ‘আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন যদি এভাবে দায়িত্বরত নার্সের ওপর হামলা চালায়। তাহলে তাদের নিরাপত্তা দেবে কে। আর এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে সবাই প্রশ্রয় পেয়ে যাবে।’আহত ট্যুরিস্ট পুলিশের বরিশাল জোনের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ‘গতরাতে বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় একটি বেপরোয়া গতির অ্যাম্বুলেন্স আমাকে ধাক্কা দেয়। এতে আমি অচেতন হয়ে পাশের ডোবায় পড়ে যায়। পরে আমার সহকর্মীরা উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে অচেতন থাকায় হাসপাতালের বিষয়টি রাতে জানতে পারিনি। তবে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের জোন ইনচার্জ বুলবুল আহম্মেদসহ কয়েকজন ছিলেন।’
তবে নার্সদের সঙ্গে আলোচনার পর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। যারা নার্সের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’পুলিশ সুপার (এসপি) ট্যুরিস্ট পুলিশ ম. রেজাউল করিম জানান, এই ঘটনায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।এ ছাড়া হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
Leave a Reply